শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩১ অপরাহ্ন
ভিশন বাংলা ডেস্ক: ভারত, চীন, জাপানসহ সবার সঙ্গেই বাংলাদেশ অত্যন্ত সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আরো বলেছেন, বিনিয়োগ নিয়ে কারো সঙ্গেই বাংলাদেশের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। গতকাল মঙ্গলবার চীনের দালিয়ানে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডাব্লিউইএফ) নতুন চ্যাম্পিয়নদের বার্ষিক সম্মেলনে ‘প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সহযোগিতা’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘ভূরাজনীতি সব সময় জীবনের অংশ। তবে আমাদের সব সময় ইস্যুগুলোতে ভারসাম্য রাখতে হবে ও প্রশংসা করতে হবে। আমরা সাময়িক লাভের জন্য দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থ জলাঞ্জলি দিতে পারি না।’
এর আগে গতকাল ভোরে দালিয়ান পৌঁছার পর সকালে ডাব্লিউইএফের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। অনুষ্ঠানে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াং তাঁর দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও সংস্কার অব্যাহত রাখা এবং আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ বিধি-বিধান বাতিল করার কথা বলেন।
পরে প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলবিষয়ক আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও কানাডা সরকারের ক্ষুদ্র ব্যবসা এবং রপ্তানি উৎসাহিতকরণ বিষয়ক মন্ত্রী ম্যারি নাগ, জাপানের সুন্তরি হোল্ডিংসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টেক নিনামি ও জেনেভার বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও এশিয়া প্যাসিফিক বিভাগের প্রধান সুশান্ত রাও অংশ নেন।
অনুষ্ঠানের উপস্থাপক শেখ হাসিনাকে দিয়েই প্রশ্ন শুরু করতে গিয়ে বলেন, বাংলাদেশ এখন বেশ জনপ্রিয় দেশ। ভারত, জাপান, চীন সবাই বাংলাদেশের ব্যাপারে আগ্রহী। আগামী কয়েক বছরে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্পর্ক কিভাবে বদলে যাবে?
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শৃঙ্খলাভিত্তিক ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার পাশাপাশি প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল নিয়ে তাঁর পাঁচ দশকের রাজনৈতিক জীবনের পাঁচটি ভাবনা তুলে ধরে বলেন, সব দেশের জন্য শান্তি, সম্প্রীতি ও স্থিতিশীলতার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। টেকসই উন্নয়নের সব প্রেক্ষাপট আমলে নিতে হবে। পারস্পরিক আস্থা ও সম্মানের ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়তে হবে। সবাইকে নিয়েই উন্নয়ন হতে হবে। প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করুন, শত্রু নয়।
তিনি বলেন, ‘এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের অগ্রযাত্রা স্বীকৃত। একইভাবে বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের লোকজনের মধ্যে ব্যাপক সম্ভাবনা আছে। বাণিজ্য বা নিরাপত্তার নিরিখে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে দেখার একটি প্রবণতা আছে। আমরা মাঝেমধ্যেই কিছু বড় অর্থনীতিকে তাদের চাহিদার ভিত্তিতে এই অঞ্চলকে দেখতে দেখি। আমাদের সম্মিলিত অগ্রযাত্রা ও টেকসই বিশ্বের জন্য অবশ্যই ছোট দেশ বা তুলনামূলক দুর্বল অর্থনীতিগুলোর উদ্বেগগুলো আমলে নিতে হবে।’
শেখ হাসিনা তাঁর উদ্যোগে এবং তৃতীয় কোনো দেশের সম্পৃক্ততা ছাড়াই মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি, ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি সই, স্থলসীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির উদাহরণ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকাল আপনি একা চলতে পারেন না। এটি একটি গ্লোবাল ভিলেজ। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে কিছু সমস্যা থাকতে পারে। তবে এটি আলোচনার মাধ্যমে বন্ধুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমাধান করা যায়। আমরা এটি করতে পারি।’
প্রধানমন্ত্রী আলোচনার মধ্যে পার্বত্য শান্তিচুক্তি সইয়ের উদাহরণ দেওয়ার পাশাপাশি রোহিঙ্গা সংকটের প্রসঙ্গ তোলেন। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে মিয়ানমার থেকে ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে ঝগড়া করিনি। বরং কিভাবে তারা তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়ে যাবে সে বিষয়ে আলোচনা করেছি। তবে অবশ্যই আমাদের সমর্থন প্রয়োজন। এই সব দেশের সঙ্গেই আমাদের ভালো সম্পর্ক আছে।’
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক বলেন, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশ একদিকে তৈরি পোশাক খাতে প্রতিযোগিতা করছে, আবার চীন থেকে বড় বিনিয়োগও নিচ্ছে। আঞ্চলিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ কিভাবে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখছে?
জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ চীন, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বিসিআইএম অর্থনৈতিক করিডরে আছে। আবার ভারত, ভুটান ও নেপালের সঙ্গে বিবিআইএনও আছে। মেগা প্রকল্পগুলোর জন্য বাংলাদেশ বিদেশিদের আমন্ত্রণ জানায়। চীন, ভারত, জাপান সবাই এখানে আসছে। কোনো ধরনের সমস্যা হচ্ছে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু বাংলাদেশ নিজের অর্থেই করছে। চীন নির্মাণকাজ করছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন অনেক শক্তিশালী। বাংলাদেশ নিজেই এখন কিছু মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে সক্ষম। আগামী ১০ বছরে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৫তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে।
তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালে সরকার গঠন করেছি। এখনো পর্যন্ত কোনো দেশ বলতে পারবে না যে আমরা তাদের সঙ্গে ঝগড়া করেছি।’
দালিয়ানে ডাব্লিউইএফের আনুষ্ঠানিকতা শেষে আজ বুধবার প্রধানমন্ত্রীর চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে।